Friday, 27 February 2015

বর্ষা নামের সেই রূপবতীর প্রতি ভালোবাসা

র্ষার সাথে আমার কবে প্রথম পরিচয় হয়েছিল তা ঠিক মনে করতে পারিনা। তবে জানি, আমি প্রথম পরিচয়েই তার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। তার অপরূপ রূপ সুষমায় মোহিত হয়ে তাকে দিয়েছি হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা। কখনো বর্ষাকে খুশি করবো বলে তাকে নিয়ে লিখেছি কবিতা। সেই কবিতায় শুধু অনুভূতি আর মুগ্ধতার প্রকাশ…
কলেজের ছুটিকালীন সময়ে আমার খুব মন খারাপ ছিলো একদিন। কিছু ভালো লাগছিলো না। সেদিন বর্ষাকে দেখেছিলাম জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাইরে– তাকে দেখেই মনে কী রকম যেন একটা ঢেউ খেলে গিয়েছিল। ভালোলাগার একটা আবেশে আমি মোহিত হয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ।
ব্যাকুল হয়ে আমি ছুটে বাইরে গিয়ে তার স্পর্শ নিয়ে ধন্য হয়েছিলাম। আমার দু’গাল পেতে তার কোমল পরশ নিয়েছিলাম… সেই পরশে আমার শরীরে বিদ্যুৎস্ফূলিঙ্গ খেলে গিয়েছিলো… আমি চোখ বন্ধ করে তার স্পর্শ অনুভব করেছিলাম আমার সমস্ত শরীরে… পরম আরাধ্য সেই স্পর্শভরা মূহুর্তগুলো আমার আজো মনের গভীরে গেঁথে আছে……

বর্ষা অতীব রূপসী। রুপের ঝলকে কত জন যে মুগ্ধ হয়েছে, তাকে নিয়ে কবিতা লিখেছে, তার আশায় স্বপ্ন দেখেছে তার ইয়ত্তা নেই। আমার বন্ধুদের মাঝেই অনেককে দেখেছি যারা ওর জন্য লিখেছে সুন্দর সব কবিতা। আমার তখন বড় হিংসা হতো।

বর্ষা এলেই বাসায় মায়ের কী আয়োজন! ব্যস্ত হয়ে পড়েন মা ওর জন্য। কখনো চিতই পিঠা আর আম দিয়ে সকালের নাস্তা, দুপুরে গরম গরম খিচুড়ী, সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত আমের আচার, একাধিক পদের সবজি– বেগুন, আলু আর পটলের ব্যঞ্জন… বেগুনের ভাজি… একটু সালাদ… আমার সব প্রিয় পদের আয়োজন!!
আমি আনন্দে নির্বাক হয়ে যাই। ইচ্ছে করে বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকতে। ইচ্ছে করে ওকে আর যেতে না দিতে।
আমি ভেবে দেখেছি, ওদের পরিবারের সকলের মাঝে আমি বর্ষাকেই বেশি ভালোবাসি। ওর প্রতি আমার মুগ্ধতা-ভালোলাগার কিঞ্চিৎ অন্যদের প্রতি হয়ে উঠে না… আমি দেখেছি, মা এটা বুঝেন।
উনি তা দেখে মুখ টিপে হাসেন। আমি যখন ওকে নিয়ে কবিতা লিখি– তা সবার আগে আমার প্রিয় মামণি-কে শোনাই।
মা বড় খুশি হন। মাঝে মাঝে বলেন–
“বাবা, বর্ষা কিন্তু কয়েকদিন একটানা থাকলে আশেপাশের সবাইকে কষ্ট দেয়। ও এলে ওর জন্য ঘর থেকে বের হতে পারবি না………”
আমি মায়ের এইসব কথা শুনতেই চাইনা। বলি–
“মা গো, ওকে যে আমি খুউউব ভালোবাসি। ও কাছে এলেই আমার ভালোলাগে যে…… আমি কষ্ট পাবো না”।
কিছুদিন থেকে বর্ষা আবার চলে যায়। আমি অপেক্ষা করতে থাকি। সময় যেন আর কাটতেই চায়না—
দিন বয়ে যায়…
রাত বয়ে যায়…
মাস কেটে যায়…
মায়াবিনী ছলনাময়ী বর্ষা আর আসে না। হঠাৎ আবার মাঝে মাঝে দেখা পাই। আনন্দের আতিশয্যে আমি চিৎকার করে উঠি। বছর ঘুরে গেলে ওর আসার সময় হয়। আমি সেই অপেক্ষায় থাকি বাকি সারাটি বছর।
হতভাগা আমি আমার বর্ষাকে কখনো খুব কাছে পাইনা। আবার খুব দূরেও যায়না…অদ্ভূত লাগে!! কেন যে আমার ভালোবাসাকে আপন করে পাইনা। কেন যে কোন ভালোবাসার সাথেই থাকে না পাওয়ার বেদনা, একটা অপূর্ণতা…… আমি বুঝে পাইনা।
যাকে ভালোবাসি, তার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণতে যেমনি অস্থির লাগে। তেমনি এই “না পাওয়া” সময়টাতে ওর কথা ভাবতেও একটা “বিরহের বেদনাময় আনন্দ” অনুভূত হয়…
কলেজে থাকতে তারিক হাউসের সামনের কাঠালি চাঁপা ফুল ছিঁড়ে গন্ধ নিতাম, আর বর্ষার কথা ভাবতাম। কী দারুণ সেই ভালোলাগা! কী যে মোহনীয় সেই দূরে থাকা! ওর জন্য আমার ডায়রির পাতা ভরে যেত। ভালোবাসা আর মুগ্ধতা ভরা শব্দাবলী, প্রতিটি অক্ষরে ঝরে পড়ত হৃদয় উৎসারিত আমার ভালোবাসা……
বর্ষাকে নিয়ে আমার অ-নে-ক কবিতা। ওকে নিয়ে অন্যেরা লিখলে সেইগুলোও আমি পড়তাম অনায়াসে– আমার ভালোবাসাকে নিয়ে লেখা বলে কথা!!
বর্ষাকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা কবিতা আমাকে অন্যরকম ভালোলাগা দিয়েছিলোঃ
আষাঢ়সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল, গেল রে দিন বয়ে
বাঁধন-হারা বৃষ্টিধারা ঝরছে রয়ে রয়ে।
একলা বসে ঘরের কোণে কী ভাবি যে আপন-মনে–
সজল হাওয়া যূথীর বনে কী কথা যায় কয়ে।।
হৃদয়ে আজ ঢেউ দিয়েছে, খুঁজে পাই না কূল–
সৌরভে প্রাণ কাঁদিয়ে তুলে ভিজে বনের ফুল।
আঁধার রাতে প্রহরগুলি কোন সুরে আজ ভরিয়ে তুলি–
কোন ভুলে আজ সকল ভুলি আছি আকুল হয়ে–
বাঁধন-হারা বৃষ্টিধারা ঝরছে রয়ে রয়ে।
আজ শুধু রোমন্থন। আজ শুধু স্মৃতিদের চেয়ে চেয়ে দেখা। আজ শুধু বসে বসে মনের স্বপ্নদের আঁকা। বিরহের গান গেয়ে মনের না পাওয়াদের জন্য আরো বেশি করে ব্যাকুল হওয়া… কষ্ট পেয়ে আরো আনন্দিত হওয়া…
ডিসক্লেইমারঃ এই পোস্টের চরিত্রগুলো রূপক। অনেকে এই বর্ষার সাথে নারী বর্ষার যোগসূত্র খুঁজে পেতে পারেন বলে লেখক সকলকে মনের কল্পনাদের প্রশ্রয় দিতে নিরুৎসাহিত করছেন। :-)


0 comments:

Post a Comment