MOnirul Islam

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.

Wednesday 28 January 2015

তোমাকে ঠিক চেয়ে নেব


১ . খুব মেঘ করে বৃষ্টি নামার আগে রাতের আকাশ যখন অফুরন্ত উল্লাসে নিজেকে লালচে রঙ্গে সাজায়, তখন মাঝেমাঝে আমার মনে অদ্ভুত একটি ইচ্ছে জেগে উঠে । বোকা বোকা একটি ইচ্ছে , কিন্তু আমার কাছে এই ইচ্ছেটি ভীষণ প্রিয় । রাতের মেঘলা আকাশ দেখলে আমার কেন যেন নির্জন একটি দ্বীপ কিনে ফেলতে ইচ্ছে করে । ইচ্ছেমত সবুজ আর নীলচে রঙ করা সেই দ্বীপটিতে শুধু আমার একলা রাজত্ব হবে । আমার অনেকদিনের ইচ্ছে , মাঝরাতের আকাশ ভেঙ্গে সেখানে যখন ঝুম বৃষ্টি নামবে , সেই বৃষ্টিতে আমি তখন দুরন্ত নদীর মত উল্লাসে মেতে উঠব । সেই বৃষ্টির আনন্দ থেকে বঞ্চিত করবার জন্যে কোন শাসনের জাল আমাকে বাঁধতে আসবেনা । আমার একলা দ্বীপে কেবল আমার মুগ্ধতায় মাখা বৃষ্টি বিলাস হবে । আর আমার সামনে থাকা ছোট্ট সমুদ্রতটে অবিরাম দুলতে থাকবে রঙ্গিন কোন পানসি , হতে পারে সেটি অনেক দুরের কোন দ্বীপাঞ্চল থেকে ভেসে এসেছে , হতে পারে সেটি কোন খেয়ালি রাজপুত্রের বিলাসী ভ্রমণসঙ্গী । হয়ত সেই পানসিতে উদাস নয়নে বসে থাকবে সেই ভীষণ সাহসী বৃষ্টিমুগ্ধ রাজপুত্র । আর উন্মত্ত বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থেকে আমি দেখব সেই রাজপুত্রের চুলের সাথে বাতাসের যুদ্ধ , বৃষ্টির ছিটেতে ঝাপসা হয়ে যাওয়া তার চশমার কাঁচ । এই যা ! কি ভাবছি , রাজপুত্ররা বুঝি চশমা পরে ? আছে কোন রাজার পুত্র যে কিনা চোখে কম দেখে বলে চশমা পরত ? কি জানি !

নিজের অজান্তেই হেসে ফেললাম । আমার ভাবনা গুলি এত বাউন্ডুলে কেন হয় কে জানে ? ফুটপাথের উপর ধীর পা ফেলে এই ভরসন্ধ্যাবেলায় যখন আমি ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি , তখন আমার এই অদ্ভুত কল্পনাবিলাসীতার কি কোন কারন থাকা উচিত ? না আকাশে কোন মেঘ আছে , না আছে ঝড়ো হাওয়া । তবে কেন যেন মনে হচ্ছে আজ রাতে বৃষ্টি নামবে , শরৎকাল তো সারপ্রাইজ দিতে ভীষণ পছন্দ করে বলেই জানি । হঠাত লক্ষ্য করলাম , একা একা হাসছি বলে কয়েকজন পথচারি ঘুরে আমার দিকে তাকাচ্ছে , সম্ভবত পাগল ঠাওরেছে আমাকে । সে যাকগে ,যার যা ভাবার তাই ভাবুক । কে কি ভাবল তা নিয়ে ইরা কিন্তু মাথা ঘামায় খুব কম সময়েই , হুম ।

ক্লিনিকটা ছোটখাট , ব্যক্তিমালিকানাধীন । আমাদের ছোট্ট এলাকার মানুষদের ভরসার স্থান । আর আমার মত রোগাপটকা হলে তো কথাই নেই , এই দুইমাসে আমি তৃতীয়বারের মত এখানে হানা দিলাম । এবারের এক্সকিউজ - কি বলা যায় ? আমি দুদিন হল আমার নাকের অস্তিত্ত টের পাচ্ছিনা , বাজে টাইপের বিচ্ছিরি লেভেলের সর্দিতে আমার নাক সম্ভবত বিলীন হয়ে গেছে । এই সমস্যাটি কিন্তু নতুন নয় , দুইমাস পরপরই আমার এই অবস্থা হয় । তবে সমস্যায় পড়তে হয় রুমাল খুঁজে পাওয়া নিয়ে । এত রুমাল কোথায় আর পাব ? বাসার মানুষজনের যাবতীয় পুরানো আধপুরানো জামাকাপড় আমার জন্যে বিশেষভাবে সংরক্ষন করা হয় । আমি এদের সদ্গতি করি নাকি দুর্গতি করি তা ঠিক জানিনা , তবে আমার সর্দি সমস্যার যে একটা গতি হয় তা কিন্তু সত্যি ।

এক ঘন্টা অপেক্ষার পর আমার সিরিয়াল যখন আসল , আমি তখন ঠিক '' পাইছিরে " টাইপের ইমোতে ছিলাম । কিন্তু আমি দরজা খুলে ঢুকবার পরই আমার দিকে তাকিয়ে ডাক্তারের ১০০ ওয়াট বাল্বের মত চেহারা ২৫ ওয়াট বাল্বের মত হয়ে গেল । আমি এখানে এত বেশি হানা দেই যে ডাক্তার থেকে শুরু করে কম্পাউন্ডার পর্যন্ত সবাই আমার চেনা হয়ে গেছে ,এই ডাক্তার তো আরো এক কাঠি উপরে । ফিচলা হাসি হেসে ডাক্তার সাহেব বললেন ,'' কি খবর তোমার ? আবার রোগ বাঁধিয়েছ ? তুমি বরং কাঁথা বালিশ নিয়ে হসপিটালে এসে পড় , তোমার ইন্টেন্সিভ কেয়ার প্রয়োজন ।'' আমি কি বলব বুঝলাম না , সত্যি বলতে কি , এই ডাক্তারের মত বেয়াদব কিসিমের ডাক্তার আমি আমার জীবনে খুব কম দেখেছি । আরে বেটা আমার অসুখ হলে আপনার কী ? আপনার তো অসুখি হবার কারন নেই , আপনার আরো টু পাইস ইনকাম হবে । তাও এত প্যাচালের কি মানে আছে ? আমার পুরো ছোটবেলা অবশ্য কেটেছে এই বেয়াদব ডাক্তারের বাবার চিকিৎসা নিয়ে , তিনি এখনও চিকিৎসা পেশাতেই আছেন , তবে অন্য হাসপাতালে বসেন । নিজের এই ক্লিনিকটাতে বসার আর এখন সময় পান না , কেন যেন বুড়ো বয়সেই ডাক্তার গুলি বিখ্যাত হয়ে যায় । এমন ভাল মানুষ ডাক্তারের ছেলে কিভাবে এমন ফিচলা বেয়াদব হল সেটা একটা ভাববার বিষয় । তবে আপাতত সেটা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে আমি চেয়ারে দুপ করে বসে পড়লাম । মুখ গোমড়া করে সরু নেইমপ্লেটের দিকে তাকিয়ে রইলাম , যেখানে লেখা - ডাঃ ফারাবী আহসান ( হ্যান ত্যান ডিগ্রি ) ।

'' এবার বল দেখি কি হয়েছে ?'' আমি খ্যাসখ্যাসে গলায় বললাম ,'' সর্দি জ্বর , গলাব্যাথা , দম নিতে পারিনা ।'' আমার দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে বলল , '' তোমাকে ওষুধ হিসেবে আইসক্রিম দিয়ে দেই ?'' মেজাজ বয়েলিং পয়েন্টে উঠে গেল , কিন্তু গলা ব্যথার কারনে কিছু বললাম না । '' ইরা ,তোমাকে মাঝেমাঝেই আইসক্রিম হাতে রিকশায় দেখা যায় , তাই বললাম । এখন বরং তুমি একটু সোফায় গিয়ে বস ,আর চারটা রুগী আছে , দেখে নেই । তুমি পুরানা রুগি তো , তোমার সাথে একটু আলাপ করব , ঠিক আছে ?'' বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম , এতক্ষন ধরে বসে আছি , আরো বসে থাকতে বলে ? কত বড় সাহস , আরে আমার সময় কি আলুখেতে ধরে নাকি ? তারপরেও আমি হতাশার সাথে আবিষ্কার করলাম , রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আমি ঠিক সোফাতে গিয়েই বসেছি । '' কফি আনাই ?'' আমি কিছুই বললাম না । বেয়াদব ছেলেদের সব কথার উত্তর দিতে নেই , তবে মিনিট পাঁচেক পরে আমাকে ঠিক গরম কফি হাতেই বসে থাকতে দেখা গেল ।

পাঠক কি ভাবছেন ? গরবল কিনা ? জি, ঠিকই ভাবছেন , এভরিথিং ইজ গরবল ।

গরবল টা যখন শুরু হয়েছিল সেটা অনেক অনেক আগের কথা । আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম । আজকের ডাঃ ফারাবী তখন মেডিকেল প্রথম বর্ষের ছাত্র । এলাকায় মেয়েদের কাছে তিনি সেই লেভেলের হিট । বিশেষ করে কলেজে পড়ুয়া আপুদের কাছে তো তিনি তখন চোখের মনি । চোখে চশমা লাগিয়ে, হাতে বই, কাঁধে ব্যাগ আর গায়ে সাদা এপ্রন জড়িয়ে তিনি যখন বের হতেন আপুদের চেহারা তখন দেখার মতন হত । আপুরা ফারাবী ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকত আর আমি আপুদের হা করা চেহারার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে স্কুলে যেতাম । আপুরা বায়োলজি বইয়ের ইম্পরট্যান্ট কোশ্চেন দাগাতে প্রায়ই ফারাবী ভাইয়ের শরনাপন্ন হত বলে আমি শুনতাম । এমন কি আমার বান্ধুবিরাও এই ছুতায় তার সাথে কথা বলত । আমাকে নিয়ে যাবার ও অনেক চেষ্টা করা হয়েছে , কিন্তু কথা হল বায়লোজি জিনিসটা আমার কোন কালেও পছন্দ ছিল না । ইম্পরট্যান্ট প্রশ্ন দাগিয়েও আমার লাভ হবেনা সেটা আমি জানতাম এবং যেহেতু সেই '' সো কল্ড '' ফারাবী ভাইয়ের প্রতি আমার কোন দুর্বলতা নেই তাই আমি কখনই আমার বান্ধুবিদের সাথে যাই নি । ফারাবী ভাইদের বিখ্যাত বাসাটা পর্যন্ত আমি সনাক্ত করিনি , শুধু তাদের গলিটা চিনতাম । ফারাবী ভাইয়ের প্রতি আমার এই অনাকাংখার কারন আমার বান্ধুবিরা প্রায়ই বুঝার চেষ্টা করত । আর এই ঝাউলা চুলের ঘুম ঘুম চেহারার আতেল ছেলের দিকে তাকিয়ে এনাদের এত প্রেম কোথা থেকে উৎপত্তি হত, আমি সেটা বুঝার চেষ্টা করতাম ।

কথা হল , আমি যেটা বুঝার চেষ্টা করতাম, দুই বছর পরে হঠাত করেই সেটা একদিন আমি বুঝে গেলাম ।

এস এস সি এক্সাম দিবার পর আমার তখন বিশাল অবসর । এত এত প্ল্যান , এটা করব ,ওটা করব , এখানে যাবো, ওখানে যাবো । কিন্তু '' হিট '' এরোসলের বিজ্ঞাপনের মতই আমার সব প্ল্যান ভেস্তে দিল একটা মশা , এক ডজন মশাও হতে পারে । বেশ কয়েকটা মশা না কামড়ালে আমার ওরকম বিচ্ছিরি জ্বর হবার কথা নয় । আমি আক্রান্ত হলাম ডেঙ্গুজ্বরে । অনেক বেশি দুর্বল হয়েছিলাম আমি , আমার ট্রিটমেন্টের জন্যে আব্বু ফারাবী ভাইয়ের বাবাকে বাসায় নিয়ে এসেছিল । চারদিন স্যালাইন দিতে হয়েছিল , আর সেটাই হল কাল । প্রথম দিন স্যালাইন দেবার সময় আমি দেখলাম , সুপারহিট ফারাবী ভাইয়া আমাদের বাসায় এসেছে তার বাবার কথামত । আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমি থতমত খেয়ে যখন তার দিকে তাকিয়েছিলাম , সে ফিচলা হাসি দিয়ে বলেছিল , '' কি ইরা ? এইটুক একটা মশাই কাত করে দিল ?'' এরপর স্যালাইন লাগাতে লাগাতে একটা প্রান খোলা হাসি । এখন আমি ভাবি , সেদিন সেই হাসি দেখে আমি তো আমি , যেই মেয়ে পাগল হতনা তার হার্ট নির্ঘাত রেইনফোরসড সিমেন্ট দিয়ে বানানো বলে ধরে নেওয়া যেত । অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ঐ একটা হাসি দেখেই আমার জ্বর অর্ধেক ভাল হয়ে গেল । আমি দুর্বল গলাতেই জবাব দিলাম , '' ওইটুক মশা আপনাকে কামড় দিলে আপনি শুধু কাত না , উপুড় হয়ে যেতেন ।'' আবার সেই হাসি । মানুষ এত সুন্দর করে এরকম বিধ্বংসী হাসি দেয় কেমন করে ? মনে হল, নাহ আর বাচবনা বোধ হয় । আতেল একটা ছেলের হাসি দেখে তাৎক্ষনিক ভাবে পাগল হয়ে গেছি , ভাবা যায়না , কি বাজে অবস্থা !

সিনেমায় দেখতাম, ছেলেরা মেয়েদের হাসি দেখে এভাবে পাগল হয় , কিন্তু একটা মেয়ে হয়ে আমি এমন একটা ফিচলা আতেলের হাসি দেখে এভাবে পাগল হয়ে গেলাম , এইটা কি একটা কথা হল ? এইটা কেন হল ? কিভাবে হল ? এবং অতঃপর কি হবে ? কোনকিছুই আমার জানা ছিল না । আমার শুধু জানা ছিল , আমি শেষ । আমার নীরব পাগলামিতে কেটে গেল অনেকদিন । আমি এসে পড়লাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে আর তিনি এখন পুরোদস্তুর ডাক্তার সাহেব । ফারাবী ভাই পাঁচ মাস হল এই হসপিটালে বসে । এই পাঁচমাসে আমি লক্ষ্য করেছি অসুখবিসুখের সময় গুলি আমার বড়ই মধুর হয়ে যায় , এমনকি রোদের মাঝে আইসক্রিম খেয়ে জ্বর বাঁধাবার জন্যে আমি কেমন যেন ব্যাকুল হয়ে যাই । বাসায় কারো ডাক্তার দেখাবার দরকার হলে টার্ম ফাইনালের আগের রাতেও আমি ধিংধিং করে তার সাথে হসপিটালে চলে যাই । এভাবে কেউ কারো প্রেমে পড়ে ? '' বাহ বাহ তুমি তো কফিমগ নিয়ে ভাল মডেলিং কর , কিন্তু আমি তো মডেলিং করার জন্যে এটা দিই নাই , তোমার গলার জন্যে দিয়েছি '' ফারাবী ভাইয়ার কথায় বাস্তবে ফিরে আসলাম , বললাম ,'' আমাকে আর কতক্ষণ বসতে হবে ? '' '' এখানে এসে বস '' , সামনের চেয়ারটা দেখিয়ে দিল । আমি সোফা ছেড়ে চেয়ারে আসতেই বলল ,'' কি গরম দেখেছ ? একটা বৃষ্টি হওয়া উচিত কি বল ? কতদিন হয়না ।'' '' কে বলেছে আপনাকে ? গত পরশু মাঝরাতে অসাধারণ একটা বৃষ্টি হয়েছে '' '' তাই নাকি ? আমি তো টের পেলাম না , তুমি মনে হয় স্বপ্নে দেখেছ ।'' '' জি না , আমি কাটায় কাটায় সোয়া এক ঘন্টা ভিজলাম , আর আপনি বলেন আমি স্বপ্নে দেখেছি ?'' বলতে বলতেই দেখলাম , ফারাবী ভাইয়া চোখ সরু করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । এইরে ! আমি কি করলাম ,বৃষ্টিতে ভিজার কথা বলে দিলাম ? আমার জ্বর আর গলা ব্যাথার এটাই যে আসল কারন ! আবার তার পুরানো ট্রিক্সে আমি পা রাখলাম , জিভে একটা কামড় দিয়ে মাথা নিচু করলাম । '' তুমি এসব কেন কর ? হাসপাতালে আসতে খুব মজা ? হাসপাতালে চিকেন ফ্রাই পাওয়া যায় ?'' আমি ফোস করে নিঃশ্বাস ফেললাম । আরে মাথামোটা ডাক্তার , হাসপাতালে ইরা 'কি' পায় আর ' কাকে' পায় সেইটা তুই জীবনেও বুঝবিনা , তাই এখন বকবক না করে চুপ থাক । '' কি কথা বলনা কেন ?'' ফারাবী ভাই একই ভাবে তাকিয়ে আছে । আমি তার মত দৃষ্টি দিয়েই বললাম , '' আপনি জানেন না আমার গলা ব্যথা ? আমার কথা বলতে কষ্ট হয় ?'' '' সেইটা তো ডাক্তারের দোষ না , তুমি মাঝরাতে বৃষ্টিতে ভিজবা আর সর্দি কাশির সোহাগ সহ্য করবানা , তাই কি হয় ?'' আমি বিরক্ত হয়ে চোখ নামালাম , এই মাথামোটার সাথে কথা বলার কোন মানে হয়না ।

প্রেস্ক্রিপশান নিয়ে উঠতে যাবো , তখন মহামান্য বললেন ,'' আচ্ছা তুমি প্রাইভেট পড়াও ?'' মনে মনে বললাম ,তোমারে পড়াব , রোমান্টিজম ,পড়বা ? এমনিতে মাথা নেড়ে বললাম ,'' পড়াই না ।'' '' পড়াবা একজনরে ? একটা মেয়ে ? ক্লাস এইটের ।'' আমি দাঁত বের করে বললাম ,'' আপনার বোন নাকি ?তাইলে পড়াবো ।'' সে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল ,'' আমার বোন সেইটা নিশ্চিত হলে কেমন করে ? গার্লফ্রেন্ডের বোন ও তো হতে পারে ?তাইলে পড়াবা না ?'' আমি লম্বা একটা শ্বাস নিতে গেলাম , কাশি চলে আসল । বেশ কিছুক্ষন পর কাশি থামলে তাকে বললাম ,'' আপনার গার্ল ফ্রেন্ডের বোন কে আমি পড়াব কেন ?'' ফারাবী ভাই মুচকি হেসে বলল ,'' কেন ? ইঞ্জিনিয়ারিং এর পোলাপাইনরা কারো গার্ল ফ্রেন্ডের আত্মীয়স্বজন পড়ায় না নাকি ?'' '' আমি দূরে গিয়ে পড়াব না , বাসায় কেউ রাজি হবেনা ।'' ফারাবী ভাই একটা কাগজে কিছু একটা লিখে আমার দিকে বাড়িয়ে বলল ,'' এই ঠিকানা , আমাদের এরিয়াতেই । পড়াবা না ?'' এই ছেলের মত খারাপ ছেলে দুনিয়াতে দুইটা নাই । প্রেম করে , গার্ল ফ্রেন্ড আছে , সেইটা আমাকে শুনাল আবার শালী কে পড়ানোর অফার ও দিল , কি বাজে অবস্থা - ভাবা যায়না ! আমি আড়চোখে তার দিকে তাকালাম , মাথা জ্বলে যাচ্ছিল আমার , তার চোখের চশমাটা গুঁড়া করে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছিল । কিন্তু সে মুখ করুন করে বলল ,'' প্লিইজ ?'' এরপরেও কি না বলা যায় ? এক মুহূর্ত পর কি যেন ভেবে বলে ফেললাম ,'' ঠিক আছে ।'' সে তার প্রাণখোলা হাসিতে আমাকে ভাসাতে ভাসাতে বলল ,'' কাল বিকেলে গিয়ে তোমার ছাত্রীর সাথে দেখা করে এসো । আমি ওকে বলে দিব ।'' '' ওকে '' বলে বের হয়ে আসলাম । ছেমড়া তোর গার্ল ফ্রেন্ডরে ইরা দেখে নেবে ! বের হওয়ার সময় একজন কম্পাউন্ডার আর দুইজন নার্সের সাথে দেখা হল । প্রত্যেকেই '' ম্যাম ভাল থাকবেন'' '' শরীরের খেয়াল রাখবেন '' ইত্যাদি উপদেশ দিল । আরে আমি একটু আগে ছ্যাকা খেয়ে সুস্থ হয়ে গেছি । আমার গা থেকে কি ছ্যাকা খাওয়া পোড়া গন্ধ আসছে নাকি যে আমাকে '' খেয়াল রাখবেন '' '' ভাল থাকবেন '' এসব শুনাতে হবে ?

আমি দিব্যি আছি । ফারাবী ভাই আমাকে ছ্যাকা দিবে আমি সেটা জানি । কথা হল , আমি ছ্যাকা খেতে পারি ,তাই বলে ব্যাকা হব নাকি ?

২ . যে গলির সামনে দাঁড়িয়ে আছি , সেই গলিতেই ফারাবী ভাইয়াদের বাসা , কোন টা আমি জানিনা , তবে এই গলিতেই । আমি চাইলেই আমার বান্ধুবিদের কাছ থেকে জানতে পারতাম ফারাবী ভাই কোন বাসায় থাকে । কিন্তু আমি চাইনি , কারন আমি চাইনি কেউ জানুক আমি তাকে পাগলামির এবসলিউট পয়েন্টের কাছাকাছি লেভেলের পছন্দ করি । বড় আপুরা তার পিছনে ঘুরতে ঘুরতে বয়ফ্রেন্ড জুটিয়ে ফেলেছেন , কয়েকজনের বিয়েও হয়ে গেছে , আমার বান্ধুবিদের ও একই দশা । বাকি ছিলাম আমি , সবার অগোচরে , হারাধনের এই শেষজন ও গতকাল ছ্যাকা খেয়েছে । ইহা ব্যক্তি যে নিজের বাসার আশেপাশের মেয়ের সাথে প্রেম করবে সেটা কে জানত ? বেটা মাথামোটা , প্রেম যে কর , ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে আমার কাছেই তুমি আসবা , এই আমি বলে দিলাম । তোমার সাথে কোন চিজ প্রেম করে সেইটা দেখতেই আমি পড়াতে আসছি ।

মেয়েটার নাম তিহা । দুই ঝুটি করা বাবু বাবু চেহারার মেয়েটাকে প্রথমেই আমার ভাল লেগে গেল । তিহাও আমাকে '' আপু আপু '' করে অস্থির করে দিল । কিন্তু এভাবে ভাল লাগলে তো হবেনা , এরা হল গিয়ে আমার ভিলেন , ভিলেন দের ভাল লাগলে কি হবে ? বাসায় এদিকে ওদিকে যেদিকেই তাকাই সেদিকেই তিহার আম্মাকেই দেখি । মোটাসোটা আন্টি রা যে কিউট টাইপের ভাল সেটা আরেকবার প্রমান হয়ে গেল । টিচার হিসেবে বাসায় এসেছি , পড়ানোর স্কিল সম্পর্কে আন্টি আমাকে কিছুই জিজ্ঞেশ করলেন না । বরং গরম গরম সিঙ্গারা সামনে এনে বললেন ,'' এই মেয়ে , জলদি একটা খেয়ে বল তো কেমন হয়েছে । ভাল হলে আরও কয়টা বানাব ।'' সিঙ্গারা টিঙ্গারা খেয়ে আমি যে ই বলতে যাচ্ছিলাম ,'' আন্টি আমি তো তিহা কে পড়ানোর জন্য আসছিলাম , তা ...... '' আন্টি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন ,'' ফারাবী আমাকে বলেছে । তোমার নাম তো ইরা , তাইনা ?''

চিন্তায় পড়ে গেলাম । মা - মেয়ে যেরকম ভয়ংকর লেভেলের ভাল , তাতে আসল ভিলেন ও যে এদের কাছাকাছিই হবে , সেটা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম । কিন্তু তাকে তো দেখছিনা । তিহার সাথেই কথা বলছিলাম । চলে আসব তার কিছুক্ষন আগে তিহা বলল , '' জানেন ইরাপু, ফারাবী ভাইয়া না একটা মিথ্যুক ।'' '' তাই ? কেন কেন ?'' '' আমাকে বলেছে , আপনি নাকি ভয়ানক রাগী । কত বড় মিথ্যুক , দেখেন ।'' আমি দম আটকে বললাম ,'' তোমার আপু মনে হয় অনেক শান্তশিষ্ট , তাইনা ?'' '' আপু ?'' '' হুম , কোথায় তোমার আপু ? দেখলাম না তো ।'' '' আমার আপুর কথা জানলেন কিভাবে ?'' '' তোমার ফারাবী ভাই ......'' তিহা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল ,'' বুঝছি ইরাপু ।'' '' মানে ?'' '' ওনার কথা আর বইলেন না । মিথ্যা কথা বলতে বলতে ঝানু হয়ে গেছে । আমার কোন আপুটাপু নাই ।'' হা হয়ে যাওয়া কাকে বলে , আমার সামনে একটা আয়না থাকলেই আমি প্রাক্টিকালি দেখে ফেলতাম । ফারাবী ভাইকে ব্রাশফায়ার করার ইচ্ছেটাকে অনেক কষ্টে আটকে কোনমতে বললাম , '' তাহলে কয় ভাইবোন তোমরা ?'' '' দুই ভাইবোন । আমি আর ভাইয়া ।ফারাবী ভাইয়া ।'' আমি উঠে দাঁড়ালাম । আমার হাঁসফাঁশ অবস্থা হয়ে গেছে । আমি এই মুহূর্তে এখান থেকে চলে যাওয়াটাকেই ভাল সিদ্ধান্ত বলে বিবেচনা করলাম । কারন এই বাসায় আরও দুই চার মিনিট থাকলে আরও কি কি যে শুনতে হবে সেটা ভেবেই আমি ভীত এবং একই সাথে আতংকিত হয়ে গেলাম !

গলির মাথায় যাবার সময় দেখলাম ফারাবী ভাই পকেটে হাত ঢুকিয়ে সেই রকম ভাব নিয়ে হেটে আসছে । কথা বলব না , কিছুতেই বলব না , হয়ত বলতাম ও না , কিন্তু কেউ ডাকলে কি কথা না বলে থাকা যায় ? ফারাবী ভাই আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল , '' তিহার সাথে কথা হয়েছে তোমার ?'' '' হয়েছে ।'' '' পড়াচ্ছ তাহলে ?" আমি নাক কান দিয়ে ধোঁয়া বের করতে করতে বললাম ,'' আপনি এরকম কেন ? তিহা নাকি আপনার গার্ল ফ্রেন্ডের বোন ? আমাকে এভাবে বোকা বানালেন কেন ?'' ফারাবী ভাই গোল গোল চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল । '' আচ্ছা আমি কিন্তু একবারও বলি নি আসলেই তুমি আমার গার্ল ফ্রেন্ডের বোনকে ...... আচ্ছা ঠিক আছে ধরলাম আমি বলেছি , কিন্তু দেখ আমার বোন মানে আমার তো গার্ল ফ্রেন্ডের ননদ , ননদ আর বোন কি আলাদা ? '' কলার ধরে ঝাঁকাতে ইচ্ছে করছিল খুব । কিন্তু এই ছেলের সাথে কথা বলে আমি আগাতে পারবোনা , তাই বাই বলে চলে আসাটাকেই ফরজ মনে করলাম ।

আর আই পি প্রেম পিরিতি ।

৩ . পিথাগোরাসের বিশাল উপপাদ্যটা বুঝাতে বুঝাতে আমি আবিষ্কার করলাম , তিহার মনটা আজকে বেশ খারাপ । সে পড়ায় মন দিতে পারছে না । খুবই স্বাভাবিক , পড়ায় প্রতিদিন মন বসবে এমন কোন কথা নেই । মনের ও মুড বলে একটা ব্যাপার আছে । আমি পড়া থামিয়ে গালে হাত দিয়ে বললাম , '' উপপাদ্য টা ভীষণ পচা , তাইনা তিহা ? একদম বোরিং ।'' তিহা ফিক করে একটু হাসল । ও আমার কাছে কখনো কিছু লুকায় না । এবারো লুকোল না , মলিন গলায় বলল , '' আপু , মন খারাপ থাকলে ভাল পড়াগুলিও বোরিং হয়ে যায় ।'' কথা সত্য । কেন মন খারাপ সেটা জিজ্ঞেস করাটা ঠিক হবে কিনা ভাবতে ভাবতেই ও বলল , '' আপু জানেন , ভাইয়া না মাদ্রাজ যাচ্ছে আগামী মাসে , কি ডিগ্রি ফিগ্রি নিবে , আমি তো বুঝিনা । ভাইয়ার জন্যে অনেক খারাপ লাগবে আমার । ঝগড়া করলেও তো আমারই ভাইয়া ।তাই পড়াতেও মন দিতে পারছি না । '' কি বলে তিহা ? ফারাবী ভাই মাদ্রাজ কেন যাবে ? এত ডিগ্রি দরকার কেন তার ? আমার চোখ দুটো পিথাগরাসের উপপাদ্যের মাঝে অযথাই এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে লাগল । এতক্ষন শুধু ছাত্রীর মন খারাপ ছিল , তাও পড়া যা একটু আগাচ্ছিল , কিন্তু যখন আমার ও ভয়াবহ মন খারাপ হতে লাগল তখন আর পড়া কিভাবে আগায় ? '' তোমার মন যেহেতু খারাপ আজ বরং একটু রিল্যাক্স থাকো ,আমি আসি '' বলে আমি পালিয়ে গেলাম । কিন্তু নিজের কাছ থেকে নিজে তো পালানো যায় না ।

আমি জানতাম আমি ফারাবী ভাই কে পাব না , একদিন না একদিন আমাকে অনেক কিছু এই চোখেই দেখতে হবে । কিন্তু আমি তো একদিন একদিন করে বেঁচে থেকে অভ্যস্ত হয়ে গেছি , তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে কখনই বেশিদূর ভাবতে পারতাম না । হাসতে হাসতে দিন কাটিয়ে কখন যে তাকে হারাবার দিন এগিয়ে এল সেটা টের ই পেলাম না । এখন সে চোখের আড়াল হবে , দুদিন বাদেই অন্য কারো সম্পদ হবে । আর আমি ফারাবী ভাইকে না পাওয়ার লিস্টে যুক্ত হব সবার চোখের আড়ালে । আমি কিন্তু অল্পতেই কেঁদে চোখ লাল করার মেয়ে , কিন্তু আজ আমি একটুও কাঁদলাম না । আজ আমি ভীষণ পরিনত ।

ছোটবেলা থেকেই রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনা আমি । খুব রাগ হলে চিৎকার করি , কিছুক্ষন পর যখন বুঝতে পারি যে চিৎকার করা ঠিক হয়নি তখন শব্দ না করে কাঁদি । আমার এতদিনের লুকোচুরি ভালবাসাটা হুট করে ভেঙ্গে যাওয়ায় যে কষ্ট আমার হচ্ছিল তা কিভাবে কিভাবে যেন রাগে রুপান্তরিত হয়ে গেল । সেই রাগে আমি না পারলাম চিৎকার করতে , না পারলাম কাঁদতে । ফলস্বরূপ পরদিন প্রচন্ড মাথাব্যাথায় ঘুম থেকে উঠলাম চোখ মুখ লাল করে । মাথাব্যাথায় রাতে এসে গেল সেই লেভেলের জ্বর । আমি প্যারাসিটামল নাপা ইত্যাদি ইত্যাদি সেবন করতে লাগলাম , এতদিনের অভিজ্ঞতা বলে তো একটা কথা আছে । পরের দিন সকালে কোন মাথাব্যাথা নেই , জ্বর নেই , কিন্তু এসিডিটির যন্ত্রণায় সোজা হতে পারলাম না । ভাবতে পারছিলাম না , কি পরিমান রাগটাই না করেছিলাম , মাথাব্যথা আর জ্বর দিয়ে বের হয়ে কুলাতে পারল না , এখন আবার এসিডিটি শুরু হয়েছে ! এরই মাঝে ডজনখানেক বার করে আম্মু আব্বু বলেছে ডাক্তারের কাছে যেতে , আমি ঘাড় বাকা করে বলেছি ,'' এমনেই সেরে যাবে ।''

বিকেল বেলায় যখন ১০০ ডিগ্রি জ্বর , হালকা মাথাব্যথা আর এসিডিটি তিনটাই হাজির হল , আম্মু তখন ভয় পেয়ে বলল ,'' রেডি হ ।'' আমি বিরক্ত হয়ে বললাম ,'' মরার জন্য ?'' '' থাবড়ায়া কানের পর্দাটা ফাটায় দিবো ।'' '' আচ্ছা দিও ।'' '' উঠতেছিস না কেন ? ডাক্তারের কাছে যাব চল ।'' ঘ্যানর ঘ্যানর চলতেই লাগল । শেষমেশ উঠলাম , ভাবলাম লাস্ট বারের মত তাকে দেখে আসিগে । আজকের পর আর কক্ষনো তার কথা ভাববনা । আম্মু কে বললাম , আমি একাই যেতে পারব ।

একা একা যেটা শুরু করেছিলাম , আজ কে একা একাই তার শেষ দৃশ্য টা দেখে আসি ।

৪. ফারাবী ভাই গালে হাত দিয়ে চিন্তিত মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল , '' এই অবস্থা হলে হবে ?'' তার কথার টাইপ শুনলে মেজাজ তো আমার এমনি খারাপ ই হয় । অন্যদিন যদিও আড়াল করার চেষ্টা করি , আজ আর করলাম না , বললাম , '' সেটা দিয়ে আপনার কি ? ওষুধ লিখে দেন । চলে যাই ।'' '' আচ্ছা '' , প্যাড হাতে নিতে নিতে বলল ,'' মাদ্রাজ যাচ্ছি জানো তো ? '' '' নাহ , এলাকায় এই নিয়ে কোন ব্যানার দেখিনি ।'' '' ও আচ্ছা তিহা বলেনি তোমাকে তাহলে । আমি মাদ্রাজ যাচ্ছি এই মাসের শেষে । আম্মা তো খুব করে ধরেছে , বিয়ে করে যেতে হবে । তা না হলে নাকি আমি একবার উড়াল দিলে আর ফিরে আসব না ।'' আমি চুপ করে থাকলাম । মনে মনে বললাম ,'' ছ্যামড়া তোর আসার জন্যে কে মরতেছে ?'' হুম আমি ই তো মরতেছি । '' বিয়ে করে দূরে যাওয়ার ইচ্ছা আমার নাই , বুঝলা ইরা ? এঙ্গেজ করে রাখা যায় । তাতে রাজি হয়েছি । '' এবারো কিছু বললাম না । তবে মনে হতে লাগল , এর কাছে কি আমি সুস্থ হতে আসছি নাকি জলদি মরে যেতে আসছি ? এই ছেলে আমাকে এসব শুনাচ্ছে কেন ? '' দেশে আসার পরে জাঁকজমক অনুষ্ঠান করে বিয়ে করব । বিয়েতে তোমাকে একটা রোল দেওয়ার কথাও আমি ভেবে রেখেছি ।'' আমি সরাসরি তার চোখের দিকে তাকালাম ,'' তাই , না ?'' আমার তাকানোর ভঙ্গীতে ডাক্তার সাহেব ভড়কে গেলেন সেটা আমি বুঝতে পারলাম । কোনরকমে বলল , '' ইরা তোমার কি হয়েছে ? কি সমস্যা ? অসুস্থ লাগছে ?'' নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বলতে লাগলাম , '' এত কথা বলেন কেন আপনি ? আমার সমস্যা জানতে চান ? আমার সমস্যা কি সেইটা আপনি বুঝেন না ? মেডিকেল কলেজ থেকে কি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন ?মানুষের সাইকোলজি ধরতে পারেন না ? আমার কি সমস্যা সেটা কোন দিন বুঝবেন না আপনি , তাই প্লিজ জিজ্ঞেশ করবেন না । দয়া করে কোন কথা না বলে জ্বর আর এসিডিটির জন্য প্রেস্ক্রিপশান লিখেন ।'' এতগুলি কথা এক নাগাড়ে বলে দেখি , ফারাবী ভাই তখনও নিঃস্পৃহ চোখে তাকিয়ে আছে । আমি কেন এসব বললাম জানিনা , কেন জানি প্রচন্ড কান্না পেতে লাগল । কান্না চেপে রাখতে গিয়েও পারলাম না , চোখের সীমানা ছাড়িয়ে একুয়াস হিউমারদের স্বাধীন আনাগোনা শুরু হয়ে গেল । তাড়াতাড়ি চোখ মুছে তাকিয়ে দেখি সে কলমের ক্যাপ খুলছে , প্রেস্ক্রিপশান লিখবে । লেখা হয়ে গেলে সে কাগজটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । আমি প্রেস্ক্রিপশানটার দিকে একবার তাকালাম ।

তাকিয়ে থাকলাম এবং তাকিয়েই রইলাম ।

'' ইরা , তোমার অসুখের একমাত্র চিকিৎসা টা হল , রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠবার পর এবং রাতে ঘুমাতে যাবার আগে ডা. ফারাবী আহসানের হাতে দুইটা করে কান মলা খাওয়া । এই ওষুধ লাইফটাইম চালাতে হবে । অন্যথায় রোগির জীবন মরন সমস্যা হবে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ডাক্তার সাহেবেরও জীবনের আশংকা ঘটবে । ''

প্রেস্ক্রিপশানের দিকে আমাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে আমার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল , '' কি হল ? '' আমি বোকার মত তাকিয়ে বললাম , '' আপনার লেখা বুঝতে পারছি না ।'' ফারাবী ভাই হতাশ হয়ে চুলে আঙ্গুল চালিয়ে বলল ,'' জীবনে বুড়া বয়সে একটা লাভ লেটার লিখলাম , তাও লেখাটা বোধগম্য হল না । এই দুঃখ কোথায় রাখি ? তবে একান্তই না বুঝলে কি আর করা , ওষুধের দোকানদারকে দেখাইও ।'' আমি ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলে বললাম , '' আমি লেখাটা কোনরকমে পড়তে পেরেছি । কথা হল , এসব ফাজলামির মানে কি ? আমার সাথে সেই কবে থেকে আপনি কেবল ফাজলামিই করছেন ,এমনটা কেন করেন ? আমি একটা মানুষ ,আমার এত সহ্য হয়না । '' সে কয়েক মুহূর্ত একদম চুপ । আমি বললাম ,'' কি ? কথা বলেন না কেন ?'' '' কি বলব আমি ? এই ক্লিনিকের প্রতিটা স্টাফ , কম্পাউন্ডার , নার্স এমনকি দারোয়ান চাচা পর্যন্ত বুঝে যে আমি তোমার উপর ড্যাম খেয়ে আছি , আর তুমি বুঝলা না ? কি জন্য বুঝলা না , সেটা তো আমি বুঝলাম না । ''

আচ্ছা আসলেই কি আমার বুঝা উচিত ছিল ? আমার সাথে সে অনেক আজাইরা আলাপ করত , এগুলো কি ভালবাসত বলেই করত ? আসলেই মনে হয় আমার বুদ্ধি বয়সের সাথে ব্যাস্তানুপাতে বেড়ে যাচ্ছে ! আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম ,'' আমাকে না বিয়েতে কি একটা রোল দিবেন ?'' '' কেন ? কনের রোল ? কনে থাকতে হবে না ?''

৫. ফারাবী ভাই কে আমি এখন শুধু ফারাবী বলে ডাকি , যদিও সে আমার থেকে বয়সে ভালই বড় । কিন্তু কি আর করব , বাগদানের পরে তো '' ভাই'' বলতে গিয়ে কানমলা খেলাম , সেই রিস্ক কি আবার নেয়া যায় ? যাই হোক , আমি এখন ফারাবীর সাথে বসে আছি । আমাদের মাঝে দূরত্বটাও আপেক্ষিক , হয়ত খুব কাছে আবার হয়ত অনেক দূরে । কারন মাঝখানে দেয়াল হয়ে আছে ল্যাপ্টপের স্বচ্ছ স্ক্রিন টা । ডাক্তার সাহেব বাগদান করেই মাদ্রাজে দৌড় দিয়েছেন কিনা তাই !

'' ম্যাডাম খুব খেপে আছেন । কি হয়েছে ?" '' তোমার মস্তিষ্ক হয়েছে ।'' '' কেন ? মাদ্রাজ চলে আসছি বলে আবার মেজাজ গরম? '' আমি দাঁত কিড়মিড় করে বললাম , '' একবার দেশে আসো , তোমার গায়ে আমি কালাসাবান ছুড়ে মারবো । এপ্রন থাকা অবস্থায় ই ।'' ফারাবী করুন মুখে বলল ,'' ঠিক আছে , আমি ঐ এপ্রন পরেই বাইরে যাব । সবাই বুঝুক জীবিত এবং বিবাহিতদের মধ্যে পার্থক্য ।'' '' চুপপ ! ''

ফারাবী চুপ হয়ে মুচকি হাসতে লাগত । আর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম , কালাসাবান আমি ছুড়ে মারবই । সাইজ করা দরকার ওকে । এপ্রন নোংরা হবে হোক । আমি যেহেতু নোংরা করব , আমিই পরিস্কার করব , সমস্যা না ।

কথা হল, বাজারে এখন ভাল ডিটারজেন্ট কোন টা ? সার্ফ এক্সেল ?নাহ যাই , টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখতে হবে !

সৃতি তুমি বেদনা

H.S.C পরীক্ষা শেষে দিন কাল ভাল যাচ্ছিলোনা মামুনের। হঠাৎ ১ বন্ধুর অনুেরাদে ১টি টিউশনি ধরল । যাদের বাড়িতে টিউশনি ধরল তারা ছিল খুব সম্রান্ত পরিবারের । ধন সম্পদের দিকে কোন অংশে কম ছিলনা। মামুন সে বাড়ির ক্লাস ৪ ছাত্র অনিক আর ক্লাস ১০ ছাত্রী তনিমাকে পড়াত । তনিমা ছিল অপূর্ব সুন্দরী । যে চোখ থাকে একবার দেখেছে সে কখনও তাকে ভুলতে পারবেনা। পড়ানোর ছলে তনিমার খুব ভাল লেগে যাই মামুনকে। মামুনেরও ভাল লাগেনি তা কিন্থু নই।মামুন ভয়ে তা কখনও তা প্রকাশ করতে পারেনি।
সময় সুযোগ বুঝে তনিমা একদিন তাঁর মনের কথা যানাই মামুনকে।মামুন প্রথমে তনিমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।কিন্থু তনিমা নাছোড় বান্দা। যে করে হোক সে মামুনকে চাই চাই। অবশেষে তনিমার প্রস্তাবে রাজি না হইয়ে পারলনা মামুন। শুরু হল তাঁদের রোমাঞ্চকর প্রেমকাহিনি, পড়ার টেবিল দুজন দুজনের দিকে থাকিয়ে তাকা, হাত থেকে কলম পরে যাবার ছলে হাতের একটু কোমল ছোঁয়া পাওয়া। এইভাবে হরধম প্রকৃতিতে তাদের প্রেম ছলতে তাকে। অন্য দিকে তনিমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আস্তে শুরু করে । মাঝে মাঝে পাত্র পক্ষের লোকজন তাদের বাড়িতে দেখতে আসত । তনিমা এইসব মামুনকে বলত।
মামুন মনে করত, মেয়ে থাকলে প্রস্তাবত আসবেই তাই বলে কি বিয়ে হইয়ে যাবে এমন কোন কথা ক আছে? কিন্থু মামুনের ধারনাকে মিথ্যে প্রতিপন্ন করে পরিস্তিতি গিয়ে ঠেকল অন্য দিকে। তনিমার এক আত্মীয় সম্বন্ধীয় লোকের কাছে এক প্রবাসী তনিমার ছবি দেখে। তনিমার ছবি তাঁর দুই চোখের ঘুম হারাম করেদে। একদিন লোভ সামলাতে না ফেরে প্রবাসী তনিমার ছবিটা পরোটার সাথে খেয়েফেলে। তারপর যেই করে হক সে তনিমাকে চাই চাই এই কথা ব্যক্ত করে। তনিমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তাদের বাড়িতে প্রস্তাব পাঠাই আর ও খুব তাড়াতাড়ি প্রবাস থেকে ফিরে আসার চেষ্টা চালাই ।
অল্প কয়েকদিনের মাঝে সে প্রবাস থেকে ফিরে আসে। অন্য দিকে জরুরি কাজে চট্রগ্রাম এর বাইরে যেতে হয়। এই ফাকে প্রবাসী তনিমাদের বাড়িতে এশে তনিমাকে দেখে যাই । তনিমার মা বাবাও প্রবাসীর ধন সম্পত দেখে রাজি হইয়ে যাই । এই দিকে তনিমাও দিশেহারা হইয়ে পরে। তাঁর দুচোখের অশ্রু গড়িয়ে পরতে তাকে সে প্রবাসীকে তাঁর সব কথা খুলে বলে কিন্থু প্রবাসী পাত্রটা ছিল নাছোড়বান্দা যত কিছু হবে হোক সে তনিমাকে বিয়ে করই ছাড়বে । বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক করা হল। প্রবাসী তনিমার সব কথা শুনে সে বিয়েটা তাড়াতাড়ি শেরে ফেলার জন্য উঠে পরে লাগে। । মামুন তাঁর কাজ শেষ করে বাড়ি এসে এই সব কথা শুনে পাগলের মত তনিমাদের বাড়ি ছুটে যাই। তনিমা মামুনকে দেখে তাঁর দু চোখের অশ্রু ছেড়ে দে । তাঁর পর তনিমা মামুনকে সব কথা খুলে বলে । মামুন বাড়ি চলে যাই। মামুন তাঁর বাবাকে বলতে ভয় পাচ্ছিলো তাই তাঁর বড় দুলাভাইকে বলল। কিন্থু মামুনের বড় ভাই আজও অবিবাহিত হওয়ার কারণে তাঁর দুলাভাই মামুনের কথাই তেমন সাড়া দিলনা মামুনের কথাই । পরে মামুনের যন্ত্রণা দেখে তাঁর দুলাভাই রাজি হয় ও মামুনের বাবাকে সব কথা খুলে বলে।
কিন্থু মামুনের বাবা তাঁর জামাইয়ের কথা কানে নিলনা। অবশেষে মামুন নিজে তাঁর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তনিমাদের বাড়িতে যাই। তনিমার বাবাকে সব কথা খোলে বলে। তনিমার বাবা এইসব কথা শুনে অনেক রেগে যাই আর মামুনকে অনেক অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দে। শুধু তাই নই ২বার তনিমার বিয়েতে ঝামেলা পাকাতে আসলে তাদের পরিবার সহ নিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার হুমকি দে তনিমার বাবা মামুনকে। উল্লেখ্য তনিমার বাবা ছিল সমাজের একজন প্রবাবশালী নেতা। তাই মামুন ও তনিমার বাবার কথার ওপর আর কিছু বলতে পারলনা । হতাশ হইয়ে বাড়ি ফিরে আসল মামুন।
এইদিকে তনিমা মামুনের সাথে দেখা করার জন্য অস্তির হয়ে উঠে ।
অনেক কষ্টে গোপনে তারা দুজন দেখা করে । এর মাঝে মামুন টিক করল পালিয়ে যাবার কথা । কিন্থু তনিমা এই সিদ্দান্ত মেনে নিতে পারলনা কারন সে তাঁর মা বাবার মনে কষ্ট দিতে পারবেনা। মামুন যেহেতু তনিমাকে সত্যি ভালবাসত তাই সেও চাইল তনিমাকে সুখি করতে। সে তনিমাকে বিয়েতে রাজি হতে বলে। আর মামুন ও তনিমাকে জানিয়ে দে যে সে  তাঁর বিয়েতে আসবেনা । কিন্থু মামুন তনিমার বিয়েতে না আসলে সে বিয়ের পিড়িতে বসবেনা আর আত্মহত্যার হুমকি দে। মামুন অবশেষে বিয়েতে আসতে রাজি হল। বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসল। গাইয়ে হলুদের দিন মামুন তনিমাদের বাড়ি গেল কিন্থু বিয়ের অনুষ্ঠানের এই আয়োজন তাঁর হৃদয়ে রক্ত হরণের শুরু করেদে। তাঁর হৃদয় ভেগে ছুঁড়ে কতবিক্ষত হইয়ে যাচ্ছিলো কিন্থু সে হাসি মুখে সবার সাতে রাত ১২ ঠা পর্যন্ত মেতে ছিল এর পর সে বাড়ি ফিরে এল।
মামুন কোন মতে গুমাতে পারলনা তাই তাঁর টেনশন দূর করার জন্য সিগারেট দরাল এক রাতে ৬০ ঠা সিগারেট কিভাবে শেষ করে দিল টা সে নিজেও জানেনা। যে ছেলে কোন দিন সিগারেট খাইনি রাত জাগেনি সে ছেলে
প্রেমের কারণে টা করতে শুরু করল । তনিমার কথা ভেবে বিয়ের দিন অপরাধীর মত হাজির হল বিয়েতে। স্টেজ সাজানোর দায়িত্বটা মামুনকে দেয়া হল। মামুন নিজ হাতে তাঁর প্রিয়ার বিয়ের স্টেজ সাজিয়ে দিল আর আড়ালে গিয়ে কিছুক্ষণ পর পর চোখের জল মুছতে তাকে।
বর যখন স্টেজ বসল তখন মামুন ভাবল আজ এই স্তানে হইত সে বর সেজে বসত আর সে জাইগাই অন্য একজন বসে আছে আর তাঁর প্রিয়াকে তাঁর চোখের সামনে নিয়ে যাবে। এই কথা গুলু ভাবতে তাঁর চার দিকটা কেমন জানি অন্ধকার হই আসল। অবশেষে প্রিয়াকে তাঁর চোখের সামনে নিয়ে যাবার ছবি দেখে তার হৃদয়ে নদী ভাগণের চেয়ে বেশি ভাগনের শুরু হল। এর পর থেকে মামুন সম্পূর্ণ অন্য রকম হইয়ে যাই এখন সে তনিমাকে টিক আগের মত ভালবাসে। এই ঘটনার ৭-৮ বছর পার হইয়ে গেল এখন ও মামুন বিয়ে করেনি এখন তাকে কিও বিয়ের কথা বললে তেলে বেগুনে ঝলে উঠে। আজ সে তনিমার কথা ভুলতে পারেনা। বিয়ের কথা ভাবলে তনিমার সৃতি গুলো তাকে পিছনে টেনে নিয়ে যাই। আজও সে গভীর রাতে সে বেদনাবিদুর ঘটনা গুলো মনে করে চোখ তেকে সবার অগুছরে অশ্রু ঝরাই......???

"ভালবাসার সুখ পাখি"


'নাহিদ' - সুদর্শন আর একেবারেই পাগলাটে একটা ছেলে। সারাদিন কাধে একটা গীটার নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ভার্সিটির সবাই ওকে গীটার-বয় বলেই ডাকে। নেকা মেয়ে গুলা যেন নাহিদ বলতেই অজ্ঞান। অথচ দুই চক্ষে সহ্য হয়না ছেলেটাকে আমার।

বি.বি.এ -৩য় বর্ষের ছাত্রী আমি। নাহিদ আমার ১বছর এর সিনিয়র। কোন কথাবার্তা ছাড়াই ও হঠাৎ একদিন আমকে প্রপস করে বসলো। কোন উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেলাম। পেছন ঘুর ঘুর করে বিরক্ত করার ছেলে ও না। কোথা থেকে যেন আমার নাম্বারটা যোগাড় করেছে। প্রতিদিন রাতে শুধু একটা করে মেসেজ করত কখনো ফোন করেনি। কোন রিপ্লাই না দিয়ে শুধু ওর মেসেজ গুলো পড়তাম প্রতিদিন। ব্যাপারটা ধীরে ধীরে ভাল লাগতে শুরু করলো। মনের আড়ালেই কখন ভাল লাগার বীজ বপন করে বসে আছি বুজতেই পারিনি।

পরপর তিনদিন ওর কোন মেসেজ না পেয়ে কেমন যেন অস্থির লাগছিল। পরদিন ভার্সিটিতে মনে মনে ওকে খুজতে থাকলাম। হঠাৎ দেখি সিমির খুব কাছাকাছি বসে ওকে গান শোনাচ্ছে। বুকের ভেতর চেপে থাকা আগুনটা যেন এবার দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো। নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। কিছু চিন্তা না করেই সবার সামনে বলে দিলাম ওকে ভালবাসার কথা। সাথে সাথে একটা মুচকি হাসি দিয়ে পেছন থেকে একটা লাল গোলাপ বের করে দিল। খানিকটা অবাক হলাম। পরে জানতে পারলাম মেসেজ না করা, আমাকে জেলাস করা, পুরোটাই সাজানো ছিল। আর তার প্রধান হাতিয়ার ছিল আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী সিমি। চোখের জলটা থামাতে পারলাম না। সবার সামনেই কেদে দিলাম। একটা কান্না মানুষকে এতটা সুখ দিতে পারে জীবনে প্রথম অনুভব করলাম।

শুরু হল ভালবাসার আকাশে কষ্ট সুখের সাত রঙ মিশিয়ে একি স্বপ্ন দুটি হৃদয় দিয়ে আঁকা। ও আমাকে সুখ পাখি বলে ডাকে। ওর পাগলামি গুলা যেন একি সাথে আমকে কাদাই আবার হাসাই। অদ্ভুত একটা অনুভুতি।

আমকে নিয়ে ওর গান। স্বপ্নের ভেলায় চড়ে তারার দেশে যাওয়া। হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজা। মাঝ রাতে আমকে দেখার নাম করে আমার বাড়ির সামনে এসে দাড়িয়ে থাকা। ক্লাস ফাকি দিয়ে মুভি দেখতে যাওয়া। একই স্বপ্ন হাজার বার ভেঙ্গে নতুন করে গড়া। সব কিছু মিলিয়ে যেন আমার একটা পৃথিবী সুখের স্বর্গ ও।

দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেল। ওর বি.বি.এ শেষ হল আর আমি ৪র্থ বর্ষে উঠলাম। যে ভয়টা বুকের ভেতর সব সময় কাজ করত সেটাই হল। আমার আর নাহিদ এর সম্পর্কের কথাটা বাসাই জানা জানি হয়ে গেল।

আব্বু আম্মুর ইচ্ছের বাইরে আপু পালিয়ে গিয়ে তার ক্লাস-মেট সহেল ভাইয়াকে বিয়ে করেছিল। ওদের ৪বছর এর রিলেশন বিয়ের এক বছরের মাথাই ছাড়াছাড়ি। এ ব্যাপারটাই যেন আমার স্বাধীনতার একমাত্র ঘাতক। সাময়িক ভাবে আমার ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ। ফোনটাও আব্বুর কাছে। এক কথায় বন্দি আমি। আপুর ব্যাপারটার পর আব্বু অনেক অসুস্থ হয়ে পরেছিল এখনো সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আব্বুর ইচ্ছের বাইরে কিছু বলা মানে তাকে মৃত্যুর পথে একধাপ এগিয়ে নেয়া। কিছুই বলতে পারলাম না।

এক সপ্তাহের মধ্যে আমার বিয়ে ঠিক করলো আব্বুর ব্যবসায়ী বন্ধু রাজ্জাক আঙ্কেলের ছেলে সুমন এর সাথে। নিঃশব্দে কাদা ছাড়া কিছুই যেন করার নেই আমার।

এদিকে নাহিদ পাগল এর মত চেষ্টা করছে আমার সাথে যোগাযোগ করার। কোন উপায় না পেয়ে সিমিকে আমার বাসায় পাঠালো খোজ নেবার জন্য। মানুষটা আমাকে অন্ধের মত ভালবাসে। এত বড় অন্যায় কি করে করবো আমি। কি করে কাদাবো এই মানুষটাকে। ঠিক করলাম পালিয়ে যাব। সবাইকে ফাকি দিয়ে অনেক কষ্ট করে বাসা থেকে বেরও হলাম। কিন্তু আপুর চলে যাওয়ার পর আব্বু আম্মুর কষ্ট লজ্জা সব কিছুর ছবিটা চোখের সামনে আবারও ভেসে উঠলো। পারলাম না। একটা ফোন ফ্যাক্স এর দোকান থেকে কাদতে কাদতে নাহিদ কে সরি বলে অর্ধেক রাস্তা থেকেই আবার বাসাই ফিরে আসলাম। এসে দেখি প্রত্যাশা অনুরূপ বাসার সবাই চুপচাপ বসে আছে। যে আব্বু আমকে কোন দিন ধমক দিয়ে কথা বলিনি সে আব্বু আমার গায়ে হাত তুললো। সারা রাত কাদলাম। কান্নাই যেন একমাত্র সঙ্গী এখন। না পারছি আব্বু আম্মুকে কষ্ট দিতে না পারছি নাহিদকে কাদাতে।

পরদিন সকালে রাজ্জাক আঙ্কেল এর একটা ফোন আমার জীবনটাতে একই সাথে মুক্তি আর পঙ্গুত্ব দান করলো। ডাক্তার এর মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী আমি কোনদিন মা হতে পারবো না। বিয়েটা ভেঙ্গে গেল। কাঁদবো না মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলব বুজতে পারলাম না। শুধু স্থব্দ হয়ে থাকলাম।

নাহিদ এর সামনে দাঁড়ানোর মত মুখ আমার নেই। সিমির মাধ্যমে ও সব কিছু জানলো। আর সব জেনে শুনেই ওর আব্বুকে দিয়ে আবারও বিয়ের প্রস্তাব পাঠাল আমার বাসাই। প্রথম বার ফিরিয়ে দিলেও এবার আর পারল না। কারণটা সহজ। আব্বু আম্মু স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা লজ্জিত হয়ে নাহিদ এর এক আকাশ সমান ভালবাসার কাছে হার মানল। পাওয়া না পাওয়াই আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের আর সুখের দিন এটা।

পরদিন নাহিদ এর অনুরোধেই আব্বু আম্মুর অনুমতি নিয়ে ওর সাথে দেখা করতে গেলাম । কথা বলার শক্তিটা যেন হারিয়ে ফেলছি। কাপতে কাপতে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।

ও কাছে এসে আমার হাত ধরে বলল- আমি শুধু তোমাকে চাই হেনা আমার আর কিচ্ছু দরকার নেই বিশ্বাস করো আমার শুধু তোমাকে হলেই চলবে। বল আমকে আর কখনো ছেড়ে যাবা নাতো ?

উত্তরে কিছুই বলতে পারলাম না। বুক ফেটে কান্না এলো। ওর এই সীমাহীন ভালবাসার কাছে আমি খুবি নগণ্য। কোথাই রাখবো ওর এতোটা ভালবাসা। কি দিয়ে শোধ করবো আমি। সুখের কান্নাটা আর থামাতে পারলাম না। চোখের সামনে থাকা স্বর্গটার দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাদলাম। ও হাত দিয়ে চোখের জ্বল টুকু মুছে দিল।

ওকে হয়তো বাবা হবার সুখটা কোন দিনও আমি দিতে পারবো না। তবে আমার শেষ নিঃশ্বাসটা পর্যন্ত এক বিন্দু কষ্ট পেতে দিবো না ওকে। তাতে আমার মরন হলেও হাসতে হাসতে মেনে নেবো সেই মরণটাকে।

আমি ভালবাসি নাহিদ। অনেক বেশি ভালবাসি তোমাকে।

একটি মেয়ে একটি ছেলেকে পাগলের মত ভালবাসে... ভালোই চলছিল তাদের দিন কাল...

একটি মেয়ে একটি ছেলেকে পাগলের মত ভালবাসে... ভালোই চলছিল তাদের দিন কাল...

১ বছর পর মেয়েটা খেয়াল করল ছেলেটা তাকে আর আগের মত ভালবাসে না...
তাকে avoid করে চলে... একটা সময় ছেলেটা মেয়েটার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো...
মেয়েটা জানতে পারলো ছেলেটার নতুন গার্লফ্রেন্ড হয়েছে...

মেয়েটা এই বিষয় নিয়ে ছেলেটিকে প্রশ্ন করতেই সে বলে অতীত ভুলে যাও...
মেয়েটা বেইমান বলে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এলো ...
সে কিছুতেই ছেলেটিকে ক্ষমা করতে পারলো না...

এই ঘটনার ৬মাস পরে মেয়েটার কাছে ছেলেটার মৃত্যু সংবাদ এলো
ছেলেটা মারা যাবার আগে মেয়েটার জন্য একটা চিঠি রেখে গিয়েছিল...
ছেলেটার এক বন্ধু এসে মেয়েটাকে টা দিয়ে গেলো...
মেয়েটা রাগে চিঠি টা ফেলে রাখলো
রাতে ছেলেটার কথা খুব মনে পড়ছিল

সে চিঠিটা খুলে পরতে শুরু করলো

বিধাতার করুন পরিহাসে আমরা এক হতে পারলাম না
যেদিন আমি জানলাম আমি আর ৬ মাস বাঁচব সেদিন থেকে বুকে পাথর চেপে তোমার সাথে অভিনয় শুরু করলাম... ভেবেছি তুমি আমাকে ভুল বুঝে দূরে সরে যাবে...
তাই তোমার থেকে দূরে থেকেছি... যখন তুমি এটা পড়বে আমি তোমার থেকে অনেক দূরে থাকবো... আমার কারনে তোমার চোখে আমি অশ্রু দেখতে পারবো না...
তাই তোমার সাথে এমন করেছি... আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো...

চিঠি টা পরতে পরতে মেয়েটার চোখের জলে চিঠি টা ভিজে গেলো......